আব্রাহাম লিংকনের পত্র

মাননীয় মহাশয়,

আমার পুত্রকে জ্ঞান অর্জনের জন্য আপনার কাছে প্রেরন করলাম। তাকে আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবেন এটাই আপনার কাছে আমার বিশেষ দাবি।

আমার পুত্রকে অবশ্যই শেখাবেন-সব মানুষই ন্যায়পরায়ণ নয়, সব মানুষই সত্যনিষ্ঠ নয়। তাকে এও শেখাবেন প্রত্যেক বদমায়েশের মাঝেও একজন বীর থাকতে পারে, প্রত্যেক স্বার্থপর রাজনীতিকের মাঝেও একজন নিঃস্বার্থ নেতা থাকে। তাকে শেখাবেন প্রত্যেক শত্রুর মাঝে একজন বন্ধুও থাকে। আমি জানি এটা শিখতে তার সময় লাগবে, তবুও যদি পারেন তাকে শেখাবেন, পাঁচটি ডলার কুড়িয়ে পাওয়ার চেয়ে একটি উপার্জিত ডলার অধিক মূল্যবান। এও তাকে শেখাবেন কিভাবে পরাজয়কে মেনে নিতে হয় এবং কিভাবে বিজয়োল্লাস উপভোগ করতে হয়। হিংসা থেকে দূরে থাকার শিক্ষাও তাকে দিবেন। যদি পারেন হাসির গোপন সৌন্দর্য তাকে শেখাবেন। সে যেন আগে-ভাগেই একথা বুঝতে শেখে, যারা পীড়নকারী তাদেরকে সহজেই কাবু করা যায়। বইয়ের মাঝে কী রহস্য লুকিয়ে আছে, তাও তাকে বুঝতে শেখাবেন।

আমার পুত্রকে শেখাবেন, বিদ্যালয়ে নকল করার চেয়ে অকৃতকার্য হওয়া অনেক বেশি সম্মানজনক। নিজের উপর তার যেন সুমহান আস্থা থাকে। এমনকি সবাই যদি সেটাকে ভূলও মনে করে।

তাকে শেখাবেন ভদ্রলোকের প্রতি ভদ্র আচরন করতে, কঠোরদের প্রতি কঠোর হতে। আমার পুত্র যেন এ শক্তি পায় হুজুগে মাতাল জনতার পদাঙ্ক অনুসরন না করার। সে যেন সবার কথা শোনে এবং তা সত্যের পর্দায় ছেঁকে যেন ভালোটাই শুধু করে-এ শিক্ষাও তাকে দেবেন।সে যেন শেখে দুঃখে কিভাবে হাসতে হয়, আবার কান্নার মাঝে সে লজ্জা নেই একথা তাকে বুঝতে শেখাবেন। যারা নির্দয়, নির্মম তাদেরকে সে যেন ঘৃণা করতে শেখে আর অতিরিক্ত আরাম-আয়েশ থেকে যেন সবধান থাকে।

আমার পুত্রের প্রতি সদয় আচরণ করবেন কিন্তু সোহাগ করবেন না। কেননা আগুনে পুড়ে ইস্পাত খাঁটি হয়। আমার সন্তানের যেন অধৈর্য্য হবার সাহস না থাকে, থাকে যেন তার সাহসী হবার ধৈর্য্য। তাকে এ শিক্ষাও দেবেন- নিজের প্রতি তার যেন সুমহান আস্থা থাকে আর তখনই সুমহান আস্থা থাকবে মানব জাতির প্রতি।


ইতি –আপনার বিশ্বস্তআব্রাহাম লিংকন।